আমাদের কথা

Spread the love

 

স্বাগতম নিত্য উপহারে!

গত শতাব্দীর শেষে- বিশেষ করে এই শতাব্দীর প্রথম থেকেই প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত বদলে যেতে থাকে। আজকের নাগরিক জীবনে ইন্টারনেট, ই-মেইল, গুগল তথ্যভান্ডার, ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া, অনলাইন শপ, অর্থের লেনদেন, পণ্য আদান প্রদানে- কত যে নাগরিক সুবিধা যোগ হয়েছে, বলা চলে হাতের মুঠোয় পৃথিবী আজ।  এনালগ থেকে এ্যন্ড্রয়েড ফোন, ডিজিটাল যুগ- তাল মিলিয়ে বেড়েছে সময়ের মূল্য, কর্ম ব্যস্ততা ও যানজট।

তাই এই বদলে চলা সময়ে নিত্যউপহারডটকম থেকে নিত্যউপহারডটশপ হয়ে এবার উপস্থিত হয়েছি।  সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত-এর সাথে দূর অতীতে নিত্য উপহার প্রকাশিত যে সকল টি-শার্ট ও পণ্য বিক্রয়যোগ্য রয়েছে সে সব পণ্য নিত্যউপহারডটশপের মাধ্যমে খুব সহজেই এখন ক্রয় করা যাবে।  অগনিত ভোক্তা শুভানুধ্যায়ী আপনাদের দীর্ঘ দিনের চাহিদা অনুযায়ী নিত্যউপহারডটশপ-এর যাত্রা শুরু হলো।  আপনাদের কাছে পণ্য দ্রুত ও সহজে পৌছানো নিশ্চিত করতে নিত্যউপহারডটশপ সচেষ্ট থাকবে।  স্বদেশী ও স্মারক টি-শার্ট চর্চার ১৮ বছর উদযাপনে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।

আমরা বিশ্বাস রাখিস্বকীয়তায়, স্বদেশী ভাষা সংস্কৃতিতে

আমাদের জন্য আমরাই টি-শার্টের ডিজাইন করতে পারি।  টি-শার্ট কিংবা যে কোন পোশাকের উপরিতল অলংকরণে দেশের শিল্পী ও দেশীয় মোটিফই নতুন-নতুনতর মাত্রা ও স্বরূপ যোগ করতে পারে।  দেশের পথে প্রান্তরে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের গায়ে গায়ে চলমান টি-শার্ট সংস্কৃতিতে নিজস্বতার নতুন অবয়ব যোগ করতে পারে।  স্বদেশী টি-শার্ট বা পোশাক চর্চায় সবসময় বিদেশী মোটিফ ও ভাবনার মুখাপেক্ষি না হলেও চলে।  রপ্তানীমুখি পোশাক শিল্পের সাফল্য একই সাথে বিশ্বায়নের যুগে- আমাদেরও নিজস্বতা তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে।  এ বিষয়ে আমাদের শিল্পী, শিশুশিল্পী এবং আলোকচিত্রিরাই সত্যিকারের ভুমিকা রাখতে পারেন।

বিগত দেড়যুগ ধরে দেশের বরেণ্য, তরুণ, শিশুশিল্পী ও আলোকচিত্রিরা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং সফল ভাবেই পোশাকে বিশেষভাবে নিত্য উপহারের টি-শার্টে নতুন এক স্বদেশ রচনা করেছেন এবং এটা বাংলাদেশের পোশাকে স্বকীয়তার এক অসামান্য চিত্র তৈরী করেছে।  নিত্য উপহারের করা বেশ অনেকগুলো ডিজাইন- টি-শার্ট, চাদর ও শাড়ি রিতিমত কিংবদন্তী, স্বদেশীকতার প্রতীক একইসাথে প্রেরণাও বটে।  ভোক্তা রসিক জনের কাছে অনেক ডিজাইনই প্রকাশের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সমান আগ্রহে সমাদৃত।

নিত্য উপহারের পোশাক- এটা একটা ধারাবাহিক সিরিজ, যাকে আমরা বলেছি ‘ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব ধারাবাহিক’।  এক বিপুল সংখ্যক সৃষ্টিশীল গুণীজনেরা সম্মিলিতভাবে টি-শার্ট, চাদর এবং শাড়িতে স্বদেশর যে নতুন দৃশ্যরূপ তৈরী করেছেন তা আপনাদের অনবরত ভালোবাসা পেয়ে এসেছে।  এটা একটা বড় ব্যাপার যা আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করে- সব মিলিয়ে এই সব সৃষ্টিশীল গুণীজন, আপনি এবং আপনারাই নিত্য উপহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

শুধু টিশার্টকে মাধ্যম করেই যাত্রা শুরু

শুধু টি-শার্টকে মাধ্যম করেই যাত্রা শুরু হয়েছিলো নিত্য উপহারের পোশাক অভিযাত্রা এই শতাব্দীর প্রথম পহেলা বৈশাখে।  আঠারো বছর পরেও এই টি-শার্টই নিত্য উপহারের প্রধান ও নিয়মিত প্রকাশ মাধ্যম।  ২০০৫ এ ছোটদের জন্য ‘বসে আঁকো’ ছবি আঁকা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুশিল্পীদের আঁকা নিত্য উপহারের টি-শার্টের ক্যানভাস উজ্জ্বল হয়েছে- আমাদের মতো আমরাও পারি- যার শ্লোগান ছিলো ‘ছোটদের চোখে বাংলাদেশ’।  ‘বসে আঁকো’ ২০১২ পর্যন্ত নিয়মিত ভাবেই আয়োজন করে নিত্য উপহার, পরবর্তী সময়ে নানা কারণে এ আয়োজন আর হয়ে উঠেনি।

২০০৬ থেকে চাদর ও শাড়ি ডিজাইন করা শুরু করে নিত্য উপহার- শীতে নিয়মিত ভাবে চাদর আর ভাষা দিবস, বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও বছরের বিভন্ন সময়ে অনিয়মিত হলেও এখনো শাড়ি করে চলেছে নিত্য উপহার।

পোশাকের অন্যান্য মাধ্যম- যেমন পাঞ্জাবী, টপস, সেলোয়ার কামিজ নিয়ে কাজ করার অভিপ্রায়ে ‘এক্সপ্লোর ফ্যাশন টেলেন্ট ২০০৭’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একদল তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার খুঁজে বের করার চেষ্টা করে নিত্য উপহার।  বিশিষ্ট ফ্যাশন ডিজাইনার ও গবেষক চন্দ্রশেখর সাহার পরিকল্পনা ও সার্বিক অনুষ্ঠান ডিজাইনে এই আয়োজনের ২০ তরুণকে নিয়ে মাসব্যাপী ওয়ার্কশপে দেশের প্রথিতযশ ফ্যাশন ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক ও রুপচর্চা বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে- রিসোর্স পার্সনগণ শিক্ষার্থী ডিজাইনারদের তাঁদের ফ্যাশন বিষয়ক অভিজ্ঞতা ও দিকনির্দেশনা দেন। বছরব্যাপী নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যা শেষ হয় এবং পরবর্তি ৫ বছর শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশীপসহ নানাভাবে এ রকম কার্যক্রম চলে।  এর মধ্য দিয়ে নিত্য উপহারের পণ্য তালিকায তরুণদের পোশাক ভাবনায় বেশ বৈচিত্র প্রতিফলিত হয় এবং নিত্য উপহার দেশীয় ফ্যাশন বিষয়ে নানা বাস্তব শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করে। শেষ পর্যন্ত পোশাকের এই মাধ্যমগুলোয় (পাঞ্জাবী, সেলোয়ার-কামিজ বা টপস) নিয়ে নিত্য উপহারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সাহসিকতা, জয় আর কিংবদন্তীর সংগী নিত্য উপহার

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় যেমন- তেমনি দুর্গম পাহাড়-পর্বত, সাগর, ঝর্ণায় অ্যাডভেঞ্চারে নিয়মিত ভাবে নিত্য উপহারের টি-শার্ট সংগী হয়েছে তরুণদের গায়ে চড়ে।  এভারেস্ট জয়ী সজল খালেদ সামিট শেষে আর ফিরে আসেননি- যেন রয়ে গেলেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হয়ে এভারেস্ট চূড়ার হিম শীতল তুষার ধবলে প্রকৃতি মাতার কোলে।  সজল খালেদের সাথে ঘুমিয়ে আছে লাল সবুজের স্মারক টি-শার্ট জড়িয়ে নিত্য উপহারও যেন।

জ্ঞান বিজ্ঞানের মেধার লড়াইয়ে বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরার কত যে আনন্দঘন চিত্রে রয়েছে নিত্য উপহারের টি-শার্ট।  ২০০৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়া বাংলাদেশ গণিত দলের নিয়মিত সাথী হয়েছে নিত্য উপহার।  ২০১৮ সালে বিশ্ব মঞ্চে দেশের জন্য প্রথম স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দল আমাদেরও করেছে গর্বিত ও উদ্বেলিত।  এছাড়াও আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড, আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, জ্যামিতি অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের সাথে নিয়মিত সংগী হয় নিত্য উপহারের টি-শার্ট।  আগামি দিনে বিশ্বসভায় এরকম সব আয়োজনে নিশ্চয়ই আমাদের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সক্ষমতার আরো অনেক প্রমান রাখবেন।

শুধু কেনাকাটার সাইটই নয়

দেড়যুগ ধরে নিত্য উপহার সমৃদ্ধ হয়েছে এক বিপুল সংখ্যক সৃষ্টিশীল গুণীজনদের সৃষ্টিশীল সব শিল্পকর্মে।  টি-শার্টে এবং চাদর ও শাড়ির জমিনে স্বদেশের দৃশ্যরূপ তৈরী করেছেন তাঁরা- কাজগুলোর সংগ্রহ আমরা এই সাইটের আর্কাইভ বিভাগে দেখতে পাব।  ছোট ও বড়দের জন্য ১২৫০টিরও অধিক টি-শার্ট, শতাধিক ডিজাইনের চাদর, মা ও বোনদের জন্য শাড়ি এবং অন্যান্য পোশাকের জন্য অগণিত ডিজাইন প্রকাশ করেছে নিত্য উপহার- সময়ের ধারাবাহিকতায় আমাদের সাথে যুক্ত সৃষ্টিশীল সব শ্রদ্ধেয় মানুষদের কাজের দিনপঞ্জিও হতে পারে এই সাইট।

পণ্যের বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে মডেল ও মডেল ফটোগ্রাফি- অনেক গুণী আলোকচিত্রির বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি পাওয়া যাবে এই সাইটে, পাওয়া যাবে জড়িত সব মডেলদের ছবিও।  এঁদের অনেকই দেশে ও পৃথিবীর বৃহৎ প্রেক্ষাপটে অসামান্য সব কাজ করে চলেছেন -আজ নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে তাঁদের অনেকেই আদর্শ মডেলও বটে।

এ ছাড়াও পর্দার সামনে ও পেছনে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন অসংখ্য মানুষ।  জড়িত এই সব সুহৃদ-বন্ধুদের স্মৃতিভান্ডারের অনেকটাই যাতে পাওয়া যায় এই সাইটে- নিত্যউপহারডটশপ এ বিষয়ে সচেষ্ট হবে।

আঠারো বছর বেশি সময় নয়, আবার কমও বলা যায়না

এই ছোট্ট সময়ে আমাদের করা সব ডিজাইন- সব টি-শার্টের ছবি তুলে রাখা সম্ভব হয়নি।  আবার সব ছবি ও তথ্য ধারাবাহিক ভাবে সব গুঁছিয়ে রাখাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।  এই আঠারো বছরে নিত্য উপহারের সাথে নানাবিধ ভাবে সংশ্লিস্ট কারো কারো কাছে কিছুটা থাকা সম্ভব- তাঁরা এ ক্ষেত্রে সহয়তার করলে নিত্যউপহারডটশপের আর্কাইভ সমৃদ্ধ হবে বলে আমরা আশা করছি।

 

বাহার রহমান

প্রধান নির্বাহী
নিত্য উপহার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *