মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে নিত্য উপহারের অন্দরমহলে তখন টুকটাক বিকিকিনি চলছে। ফ্যাশন হাউসটির স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউবে সিএনএন চ্যানেলের খবর দেখছেন। টেবিলে ২৯ জুনের প্রথম আলো। তাঁর বসার পরিবেশ অনাড়ম্বর; কিন্তু কোথায় যেন সৃজনশীলতার ‘জলছাপ’—সহজে দেখা যায় না, খেয়াল করলে ধরা পড়ে।
বাহার রহমানের চেয়ারের পাশেই বইয়ের তাক। সেখানে সাজানো কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য আর চিত্রকলার বই। বইগুলোতে ধুলা জমেনি। ধুলা জমেছে ছাদের তাকে বান্ডিল করে রাখা কাগজপত্রে। নিত্য উপহারের হিসাবের কাগজপত্রই হবে হয়তো। উনিশে পা দিল নিত্য উপহার; প্রতিষ্ঠানটি ১৮ বছরে তরুণদের জন্য এনেছে ১ হাজার ২১৯টি ডিজাইনের টি–শার্ট। দীর্ঘদিনের হিসাবের কাগজে ধুলা তো জমবেই।
টি–শার্টের মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্য বুকে বুকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিত্য উপহার নিত্যই প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ১৮ বছর পেরোনোর পর কী মনে হচ্ছে বাহার রহমানের? উত্তরে বললেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প এক মিনিটে যে পরিমাণ পোশাক উৎপাদন করে, নিত্য উপহার হয়তো সেটা করেছে ১৮ বছরে। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই পোশাকের মাধ্যমে স্বদেশি চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। দেশের অনেক গুণী শিল্পী আমাদের টি–শার্ট বা শাড়ির নকশা করেছেন। সহজ জনপ্রিয়তার রাস্তায় না হেঁটে তাঁরা আমাদের নিজস্ব নকশা ও গৌরবের বিষয়গুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ফলে তরুণদের কাছে নিত্য উপহারের পোশাক মানে অনুপ্রেরণাও।’
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আগামী প্রকাশনী থেকে ৬৪ জেলায় কী দেখেছি: সাইকেল ভ্রমণের রোজনামচা নামে একটি বই বেরিয়েছে। তাতে লেখক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ‘শুরুর আগে’ অংশে লিখেছেন, ‘শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের “নিত্য উপহার” থেকে একটা টি–শার্ট কিনেছিলাম। টি–শার্টে লেখা ছিল, “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া”। তখনই মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, দেশ দেখতে হবে। বলা যায় এই তাড়নাতেই ২০০৮ সালে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ সাইকেলে ভ্রমণ করেছিলাম।’
বাহার রহমান নিত্য উপহারের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠার যে কথা বলছিলেন, তার মোক্ষম উদাহরণ। তবে নিত্য উপহার গড়ে তোলায় অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কোথা থেকে? ২০১৮ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত বাহার রহমান নিজের এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমাদের স্বকীয়তা, নিজস্ব ভাবনা ও আত্মপরিচয়’। নিত্য উপহার প্রথম টি–শার্ট আনে ২০০১ সালে, অচেনা এক বাংলাদেশের বৈরী সকালে। পয়লা বৈশাখের ওই সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় পরিবেশ থমথমে। কিন্তু ততক্ষণে শিল্পী ধ্রুব এষ ও সব্যসাচী হাজরার নকশায় সাতটি টি–শার্টের মোড়ক উন্মোচনের জন্য প্রস্তুত। নিত্য উপহারের বন্ধু–স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে মোড়ক উন্মোচন ও প্রদশর্নীর উদ্বোধন করলেন শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্য। শুরু থেকেই নিত্য উপহারের টি–শার্ট তরুণদের প্রিয় পোশাক হয়ে উঠল। এখন এ দেশের শিক্ষিত তরুণেরা ভিনদেশে পাড়ি জমানোর আগে আজিজ কো–অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার নিত্য উপহার থেকে অন্তত একটি হলেও টি–শার্ট কিনে নিয়ে যান। বিশেষ করে ‘পতাকা টি–শার্ট’টি।
কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, আবুল বারক আলভি, শেখ আফজাল ও চন্দ্রশেখর সাহার মতো চিত্রশিল্পী ও ডিজাইনাররা নিত্য উপহারের জন্য নকশা করেছেন। ধ্রুব এষ, সব্যসাচী হাজরার হাতের ছোঁয়া তো ছিল শুরু থেকেই। এ ছাড়া আনিসুজ্জামান সোহেল, নাজিব তারেক, কনক আদিত্যসহ আরও অনেক গুণী শিল্পীর নামও জড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে। উদ্যোগ, ভাবনা ও পরিকল্পনায় শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন অনুপম চক্রবর্তী, তনুজা ভট্টাচার্য, আমীরুল রাজিব, মুনেম ওয়াসিফ, সৈয়দ নিজার, নিলিম, টুটুলসহ আরও কজনের নাম। এখন পর্যন্ত ৫৫ জন শিল্পী, ৪৫ জন শিশুশিল্পী ও বেশ কজন আলোকচিত্রীর তোলা ছবি দিয়ে টি–শার্ট বানিয়েছে নিত্য উপহার। তবে ওই যে পতাকা টি–শার্টটিই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। খুব সহজ নকশা—সবুজের বুকে লাল বৃত্ত। তবে বাহার রহমান যা বলতে চাইলেন তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণীর ছায়া, ‘সহজ নকশা যায় না করা সহজে’! ২০০৪ সালে স্লোভাকিয়ার এক তরুণ টম বরিস স্নাতক শেষে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। নীলক্ষেতের পুরোনো বইয়ের দোকানে টি-শার্ট পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে দেখে জানতে চান, ‘এই টি–শার্ট কোথায় পাব?’ জবাব এল, ‘আজিজ মার্কেটে পাবেন।’ বাহার রহমান বলেন, ‘টম বরিস আমার এখানে আসেন। নানা কথাবার্তার পর বলেন, “তোমাদের পতাকা ফুটে ওঠে, এ রকম কোনো স্যুভেনির, টি-শার্ট নেই?” আমি বললাম, “তুমি কদিন থাকবে? দেখি পারি কি না!” কিন্তু হলো না। দুটি টি-শার্ট নিয়ে গেলেন বরিস। আরও একটির দাম অগ্রিম দিয়ে গেলেন, “যদি করতে পারো, পাঠিয়ে দিয়ো আমার ঠিকানায়।” মে অথবা জুনে পাঠানো গেল শেষমেশ। টম বরিস মেইল করলেন, “তুমি ঠিক আছ তো! তোমার দেশে বন্যা হয়েছে, টেলিভিশনে দেখলাম। তোমার এই পতাকার প্রতীক টি-শার্টটি একদিন খুব জনপ্রিয় হবে, দেখে নিয়ো। গুড
লাক। বরিসের কথাটি ফলে গেল। পতাকা টি–শার্ট দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠল।’
এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশি পর্বতারোহীরা তাঁদের অভিযানের সময়ও পরেছেন এই পতাকা টি–শার্ট। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দল তো এই টি–শার্টটিকে জার্সি হিসেবে গায়ে চাপিয়েছে। জিতেছে স্বর্ণপদক। বাহার রহমান বলেন, ‘টি–শার্ট কখনো শিল্পীর ক্যানভাস, কখনো হয়ে ওঠে স্মারক, স্যুভেনির বা মোমেনটাম; আবার কখনো গর্বের ও প্রেরণার প্রতীক। স্মারক এমন এক ধারণা, যা আমদানি বা রপ্তানি করার মতো নয়, কিন্তু বিনিময় ও সংগ্রহ করা যায়। নিত্য উপহার সেটাই করতে চেয়েছে। মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।’
১৮ বছর পূর্তি গত ২২ জুন ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে ‘স্বদেশী চর্চার ১৮ বছর পূর্তি উদ্যাপন, প্রদর্শনী’র আয়োজন করেছিল নিত্য উপহার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘নিত্য উপহার স্বদেশি চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের পোশাকের ক্ষেত্রে বাহার রহমান ও নিত্য উপহার একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে।’
[ লেখাটি দৈনিক প্রথম আলোর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। মূল পত্রিকায় এই লিংক থেকে পড়া যাবে।]
all the time i used to read smaller posts that as well clear
their motive, and that is also happening with this article
which I am reading now.
Hey very cool web site!! Man .. Beautiful .. Amazing .. I’ll bookmark your web site and take the feeds also…I am happy to find so many useful info here in the post, we need work out more techniques in this regard, thanks for sharing. . . . . .
This iis the perfect website for anybod who really wants to understand this topic.
You understand so much its almost hard to argue with you (not that I really will need to…HaHa).
You certainly put a new spin onn a subject that’s
been written about for years. Wonderful stuff,
just great!
Very nice post, I surely love this site, keep it up. Monte Angley
What you said made a ton of sense. However, think on this, suppose you added a little content?
I mean, I don’t want to tell you how to run your blog, but suppose you added something that makes people desire more?
I mean আঠারোর তারুণ্যে নিত্য উপহার –
Nitya Upahar is kinda boring. You ought to look at Yahoo’s home pave and note
how they write plst headlines to get people to click.
You might add a related vvideo or a related picture or
two to grab people excited about everything’ve got too say.
In my opinion, it might bring your posts a little bit more interesting.