প্রস্তাবনা
দেখতে দেখতে বহুকাল কেটে গেলো। বাড়ির নিচতলায় সদর দরজার পাশে একটা ঘর, গাদাগাদি করে রাখা নানা জিনিসপত্রের সমাহার। অনেকটাই আছে সারি দিয়ে তাকের উপর- কিছু আছে চটের বস্তায়, আর কিছু দড়ি ও সুতলি দিয়ে বাঁধা। ঘরে এক প্রকার পা ফেলার অবকাশ নাই। তিরিশ বৎসরেরও অধিক সময় ধরে একটু একটু করে এইসব জমেছে। কিছু আছে প্রাক টি-শার্ট যুগ, মানে গত শতাব্দীর দ্রষ্টব্য। এ ছাড়া বেশিরভাগ টি-শার্ট শুরু পরবর্তী সময়ের। তখন অবশ্য ঘরটা টিনশেড ছিলো- এ স্থান থেকেই ‘নিত্য উপহার’ যাত্রা শুরু করেছিলো। বেশ কয়েকটা ঠিকানা বদল হয়ে বছর চারেক আগে এই ঘরেই আবার দ্রব্যগুলোর ঠাঁই হয়েছে। আবার কখন কোথায় এর স্থান হবে কে জানে! বছরখানেক আগে ঘরটা শেষ গোছানো হয়েছিলো। জিনিসপত্রের বাহুল্যে জায়গার সংকুলান হয় না। রাস্তার গা ঘেঁষে জানলার পাশে বসার চেয়ার- কোরোসিন কাঠের টেবিলের উপর আছে একটা পুরনো মনিটর, লেখার প্যাড, পেন্সিল-কলম ও টুকিটাকি। মাঝে মাঝে এখানে বসি, সম্মুখের বস্তুগুলো দেখতে দেখতে অতীত দিনের স্মৃতিরা সব স্বপ্নের মতো এসে মনকে উদাস করে।
ফেলে আসা সেই দিনগুলোয় কত রকম কাজই তো করে দেখা হলো! বাহ্যিক এসব কাজের ফিরিস্তিও কম নয়। সর্বপ্রথম ঠিকাদারির চেষ্টা পিডব্লিউডিতে। একটা কাজ পেয়েছিলাম, তারপর বছর দুয়েক ঝুলেছিলাম, ধাতে সইলো না- অন্য পথ ধরতে হলো। একটা স্ন্যাকসের দোকান করেছিলাম এরপর জাকির হোসেন রোডে, এক বন্ধুর সহযোগিতায় ধার-টার করে। প্রথমদিকে, একদিন ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমার সামনের টেম্পো স্ট্যান্ডে তেহারি প্যাকেট করে নিয়ে গিয়েছিলাম। খুব সম্ভবনাময় মনে হয়েছিলো, টান টান উত্তেজনা- নাহ, দু’প্যাকেটের বেশি বিক্রি করাগেলো না। ঘরে তৈরি খাবারের এই স্ন্যাকসের দোকানটা আট ন’মাস টিকেছিলো। ক্ষীণ ও অনিয়মিত ধারার মতো চলছিলো টুকটাক ছাপার কাজের অর্ডার সরবরাহ। সাথে নোটবই, স্লিপপ্যাড এ রকম হালকা কিছু করা যায় কি-না, সে চেষ্টাও ছিলো। পুঁজি তেমন কিছু ছিলো না। সামান্যই ছাপার কাজ পরিচিতজনেরা দিতেন- এই যেমন তিনটে ভিজিটিং কার্ড কেউ করতে দিলেন, দুই রংয়ে ছেপে দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে খোঁজা শুরু হতো অন্য পরিচিতজনেরই কাছে, তাঁর বা তাঁর পরিচিত অন্য কারো কার্ড লাগবে কি-না! -একই ছাপার খরচে যে কয়টা কার্ড ছেপে দেওয়া যায়, তাতেই লাভ। এভাবে একবার বার তেরোটি কার্ডের কাজ জোগাড় হয়ে গেলো। এর কোনো কোনোটার আবার ডেলিভারির টাইম যায় যায়। সঙ্গে অল্প কিছু বাড়তি কাগজ ও পজিটিভ খরচ জোগাড় করে বাই-প্রডাক্ট হিসেবে কবি আবুল হাসানের ‘সত্য পাখি সচ্চরিত্র ফুল’ কবিতা কার্ডের কভারও ছাপতে দেওয়া হলো! চার রংয়ে ছাপা হবে, চার-পাঁচটা লোগোও আছে কার্ডে, আহারে, সে এক কেলেঙ্কারি! গভ. গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র এই প্রেসে কাজ করতেন, তিনি পেস্টিং করে দিয়েছিলেন। প্রথম রঙ ছাপা শেষ; কিন্তু দ্বিতীয় রঙ ছাপার সময় রেজিস্ট্রেশন যে কিছুতেই মিলছে না! একেকটা শিটে একেক রকম ছাপা! এই প্রেসে হাইডেলবার্গ জার্মানির কর্ড মেশিন আছে জেনেই তো কাজ নিয়ে এসেছি। পরে জেনেছি, এই প্রেসে মামুলি এক রংয়ের ছাপার কাজই শুধু করা যায়। কেউ ধারণাও দেয়নি এ বিষয়ে; কিন্তু ততক্ষণে যে, আম ছালা দুটোই যায় যায় পরিস্থিতি!
তখন শহরে সবে টেলিভিশনে ডিস ক্যাবল সংযোগ শুরু হচ্ছে- বিনোদনের নতুন এক জগৎতের হাতছানি। ছাপার কাজের খোঁজে এক অফিসে গিয়ে নতুন এক কাজে জড়িয়ে গেলাম- বেইলি রোড এলাকায় ডিস লাইনের সংযোগ দিতে হবে। একদম নাবাল জমি- তখনো শহরে এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা একেবারে নতুন। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের কলোনি আছে, আছে ‘আশিয়ান’, ‘ককেশন’ সব মন্ত্রী-আমলাদের ডেরা এ এলাকায়। একসঙ্গে অনেক ফ্ল্যাট, অনেক পরিবার- তাঁদের ডিস টিভি চ্যানেলের সুবিধা নিয়ে গুণগান করে প্রলুব্ধ করতে হবে- মোট ষাটটা চ্যানেল দেখতে পাবেন, তবে দুঃখিত প্রথমে ৬/৭টি চ্যানেল দেখতে পাবেন ক্রমে চ্যানেল বাড়বে। তারপর সংযোগের ব্যবস্থা করা। ওখানেই পরিচিত হলাম কবি আলতাফ হোসেনের সঙ্গে। সেই সূত্রে ‘সঙ্গে নিয়ে চলে যাই পাহাড় চূড়ায়’ কবিতার বই প্রকাশের সুযোগ হয়েছিলো। প্রকাশনার নাম- নিত্য প্রকাশ। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান। ভালো হয়েছিলো বইটা- যেমন লেখায়, তেমনি আঁকায়। সহযোগিতায় ছিল মেঘ, প্রথম কবিতা ছিলো এমন-
‘যা লেখা হবে তা লেখা হবে, নয় কম কিংবা বেশি
অক্ষর নিজের মতো, শব্দ নিজেরই মতো থাকবে দাঁড়িয়ে কথাতো বটেই কমা, দাড়ি
ওরা যা লিখুন, আবহটা জল হাওয়া যত বদলাক
আকাশেই ভাংচুর ছিলো
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ।
কাজ করেছি করোগেটেড কার্টুন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে। তা একরকম জোর করেই- তারা আনন্দের সঙ্গে নিয়োগ দেয়নি। বিনা বেতনে প্রতিদিন আট দশটা গার্মেন্টসে তাদেরই পণ্যের প্রচারণা! অর্ডার আনতে পারলে ভালো আর অর্ডার ধরতে না পারলেও ক্ষতি নেই, আপাতত আপদ বিদায় হয়েছে! সোমনাথের যেমন বিশ্বনাথ বোস- বিশুদা, আমারও এক বন্ধু জুটেছিল। বয়স পঞ্চাসের মধ্যে, মানিক দাশ, চট্টগ্রামের মানুষ। কোনো এক সময় ম্যাকে কাজ করেছেন। দেশের প্রথম রফতানিমুখী কার্টুন কারখানা, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ঘেঁষে এই কারখানা দেখে রীতিমতো বিস্মিত। কার্টুন আর মার্কেটিংয়ের পথ-ঘাটের নানা আট-ঘাট শিখিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন কারখানায় যেতাম। ক’মাস পর শহরের এ মাথা থেকে ও মাথাতক ঘুরতাম একা একাই। মানিকদা ওকালতি করে দিয়েছেন রূপসায়- অর্ডার এনে দিতে পারলে তিন থেকে পাঁচ পারসেন্ট কমিশন। দাম যে ডলারের হিসাবে! হাজার পাঁচেকের একটি অর্ডার পেলেই তো কেল্লা ফতে! তখন শহরময় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ছড়াছড়ি। তখন মিরপুর রোড, এলিফ্যান্ট রোড, এয়ারপোর্ট রোড শুধু নয় পুরো রাজধানী জুড়ে অনবরত চলতে থাকতো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সাথে জড়িত বিশ্বজয়ী বিশাল এক কর্মীবাহিনীর কল-কোলাহল ও ব্যস্ত পদচারনায় মুখরতা। আসাদ গেট থেকে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত ক’টা ফ্যাক্টরি পথে পড়ে! ফ্যাক্টরির ঠিকানা, এমডি, জিএম ও সিএমের নাম জেনে বের হতাম- ‘প্লিজ গিভ মি আ চান্স টু শো মাই পারফরমেন্স। আই এম ওয়াকিং উইথ রূপসা অথবা সিভিক পেপার কনভার্টিং এন্ড প্যাকেজিং’। বয়ানটা মোটামুটি এমনই।
পরের দিন হয়তো আবার গার্মেন্টস ডিরেকটরি দেখে টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর এক নম্বরতক ক’টা গার্মেন্টস আছে, টুকে নিয়ে শুরু হতো দিন। থ্রি-ফ্লাই, ফাইভ-ফ্লাই ও সেভেন-ফ্লাই কার্টুনের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা জানালেই অংক কষে দাম বলে দিতে পারতাম। সূত্রটা মানিকদা শিখিয়ে দিয়েছিলেন- ডাইরিতে টুকে রেখেছিলাম, যদি ভুলে যাই! না কোনো সম্মানী নেই, অর্ডার পেলে কমিশন, মানে দালালি। সারাদিনে খাওয়া-দাওয়া ও যাতায়াত খরচ সাকুল্যে দশ টাকা, বাড়ি থেকে দেওয়া দৈনিক বরাদ্দ। এর মধ্যে দুপুরে দুটো তন্দুর রুটি আর ডালও হয়ে যেত, হয়ে যেত যানবাহন ভাড়াও। তবে বাড়ি ফেরার ভাড়ায় টান পড়তো প্রায়ই। দিনশেষে বিকেলে পিজি হাসপাতালের পেছনে আমতলার আড্ডায় প্রায় প্রতিদিন। কোনোদিন হয়ত দেখতাম ‘মহান ইচক’ আগেই এসেছেন- দূর থেকে দেখেই হয়ত শুরু করলেন- ‘নিত্য তোমার যে ফুল ফুটুক ফুলবনে..’। শামসুল কবীর কচি, কচি শব্দের বর্ণানুক্রম উল্টে হয়ে গেলেন ‘ইচক’। মহান ইচক, ইচক দুয়েন্দে মজার মানুষ, কদমছাঁট চুল, নাদুস-নুদুস স্বাস্থ্য, গোলগাল চেহারায় গোল ফ্রেমের চশমা। অপ্রচলিত কমলা বা উজ্জ্বল, কটকটে হলুদ রংয়ের সুতি কাপড়ের ফতুয়া এবং একই রংয়ের পায়জামা গোড়ালির উপর থাকতো। বিখ্যাত গল্প ‘সখাবাবা’, -সাকুল্যে তিন কি চারটে গল্প লিখেছেন তখন, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে আজো অনেক কিংবদন্তি। পদ্মাসনে বসা মহান ইচকের কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিচিত ব্যাপার, তবে মাঝে মাঝে তাঁর ‘স্বরচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত’ও শুনতাম। আজো কানে বাজে -উচ্চকণ্ঠে তাঁর সে গান, আমতলা আর সামনের খোলা জায়গাটা পেরিয়ে পিজির ভবনে ধাক্কা খেয়ে গমগম করে উঠতো। বলাই বহুল্য, মহান ইচক দুয়েন্দের অনেক ভক্তই ছিলেন আমার মতো। এই আম তলায় আরো অনেকেই নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে আসতেন। মাঝে-সাঝে কিংবদন্তির সাধু কবি সাবদার সিদ্দিকি’রও দেখা পেয়েছি। বোহেমিয়ান, বহু যুগের পরম্পরায় এ কালের চর্যাকবি, তাঁর লেখার ধরণ নিজস্ব ‘সরল বর্গীয়’ ছবির মতো হলেও আসলে তা সরল নয়। কম বর্ণ ও শব্দ ব্যায় করে কবিতা লিখতেন।

হাঁটতেন খালি পায়ে, পরতেন আলখাল্লা, সাথে নিজের মগ, সেই মগেই পান করতেন। আমাকে একদিন খুব গালাগাল করেছিলেন- ‘চাষার পোলা- প্যান্ট পইরা ভদ্রলোক সাজছো!’ কিছু একটা চেয়েছিলেন, নাই বলাতে তেড়ে এসেছেন। এই আড্ডাটা অনেকদিন বহাল ছিলো, কোথায় আছেন আজ সেই বিকেল-সন্ধ্যার সেই প্রিয় মানুষগুলো!
এলিফ্যান্ট রোডে, বাটার মোড়ে স্মরণীকা গার্মেন্টস, স্টক-লটের ফলে লাটে উঠেছে, কর্মী তেমন কেউ নেই। বলতেই দেখা করার সুযোগ হলো, আমার মতোই বয়স এমডি সাহেবের। আনন্দ হলো এই জন্য যে একজন তরুণ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলা গেল। যথারীতি কোনো আশা-ভরসার কাজ হলো না। ঠিক এরই সামনে রাস্তার ওপারে তিন তলায় এইচএম গামের্ন্টসেও তথৈবচ অবস্থা; কিন্তু স্বাস্থ্যবান, ফর্সা বছর চল্লিশ বয়সের এক ভদ্রলোক বসে আছেন। নাম প্রবীণ সাঁই, আগ্রার লোক, ইতালিতে ওয়্যারহাউস আছে তাঁর, এই কারখানাটা লীজ নিয়েছেন, জগিং স্যুট তৈরি করবেন- তারই প্রস্তুতি চলছে, জানলাম পরে। আমার নির্ধারিত বাঁধা বাক্যটা শুনেই হাঁক দিলেন- ‘রাম বিলাস! রাম বিলাস! কার্টুনকা মেজরমেন্ট নিকালা! ই বাচ্চাকো মেজরমেন্ট দেনা!’ এই রাম বিলাস শ্রীলঙ্কার মানুষ, তিনি প্যাটার্ন ও সেম্পল মাস্টার। সেদিন প্রবীণ সাঁই একটা কাজ দিলেন, এটাই ছিলো কার্টুনের প্রথম অর্ডার। কেন যেন একটু স্নেহার্দ্র আমার প্রতি, মাঝে-সাঝে দেখা হলে গাড়িতে করে উত্তরায় চার নম্বর সেক্টরে তাঁর অফিসে বা নারায়ণগঞ্জে কোনো কারখানায় নিয়ে যেতেন। কিন্তু অন্য গল্প লেখা আছে আগামী দিনের দিনসূচিতে- সে সময় কী জানতাম! তখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। হরতাল, মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শহরময়।
এমনই একদিন উত্তরা থেকে পল্টন আসছিলাম মিনিবাসে চড়ে। শান্তিনগর এসে বাস ছাড়তে হলো, দ্রুম-দ্রাম করে ককটেল ফুটলো, হুড়োহুড়ি লেগে গেল- কার আগে কে নামতে পারে। হেঁটে চলে গেলাম বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক প্রকাশকের দফতরে। ইতিপূর্বেও আরেক পকেট বই প্রকাশকের এক’শ অটোগ্রাফ বইয়ের আশিটা অটোগ্রাফ সংগ্রহের জন্য শহরের স্বনামধন্য সুধীজনের দোরে ঘুরেছি। এরপর আরও একটা খ্যাপ পেয়েছিলাম, শপিং গাইডের জন্য শহরময় ভিআইপি শপগুলোয় ঘুরতে হয়েছিলো। দৃশ্যটা শুরু এভাবে- একটা পুরানো ব্রিফকেসে কিছু লিফলেট, ভিজিটং কার্ড, আরও হাবিজাবি গুজে দেওয়া হলো। আমার চেয়ে বেশ বড় সাইজের একটা পুরানো কোটও এগিয়ে দেওয়া হলো, গায়ে পরে কাজে বের হতে হবে। জানি না সেদিন দেখতে কেমন লাগছিলো! তবে আরও করুণ দৃশ্য অপেক্ষা করছে সামনে, একটা পুরানো টাই বের করলেন- রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছি, শেষে আমার ভাব দেখে আর গলায় ফাঁস পরানোর জন্য জোর করলেন না, অবশেষে টাই ছাড়াই পথে নামা গিয়েছিলো। সেবার মোটেও সাড়া পাওয়া যায়নি, শপিং গাইডও আর আলোর মুখ দেখেনি। আজো মাঝে মাঝে সেই বেমানান পোশাকের সেই উদ্ভট মানুষটার ছায়া দেখতে পাই- শহরের পথে চলতে চলতে মিনিবাসে কি বাসে, আজো কি জানি সব নিয়ে বিভোর রয়েছেন!
কিন্তু সেদিনের সেই হট্টগোল থেকে বেরিয়ে প্রকাশকের দফতরে পৌঁছে আপ্যায়নের গন্ধ পেলাম। -‘আরে মিয়া থাকো কই- তোমারে পাওয়া যায় না!’ দেখি চার রংয়ে সুন্দর ভিজিটিং কার্ডও তৈরি রয়েছে আমারই নাম ছাপা। যাকে বলে, ছাল নাই কুত্তার নাম বাঘা- অবশেষে ওই দফতরেই দু’হাজার টাকা বেতনের নির্বাহী পরিচালক! এবার আর বাইরে ঘোরাঘুরি নয়, টাইপ রাইটারে চিঠিপত্র লেখা, ফোনে যোগাযোগ রাখা আর অফিস আগলে বসে থাকা। এভাবেই করোগেটেড কার্টুন পর্ব শেষ হলো। জানিনা কোথায় কেমন আছেন আজ সেই মানিকদা! আর আগ্রার প্রবীণ সাঁই, তিনি নিশ্চয় বাংলাদেশে ব্যাবসায় সফল হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আর কখনোই এঁদের দু’জনের সাথে যোগাযোগ হয় নাই।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই কাজটাও বেশিদিন করা গেলো না। বছর দেড়েক পরে ইস্তফা দিয়ে দিলাম। একদিন, -‘ভালো না লাগলে একমাস আগে বলে দিও!’
বললাম, -‘আমি আগামী মাস থেকে আর কাজ করবো না’।
তিনি বললেন, -‘তোমার আর কাজ করা লাগবে না, আগামী মাসে এসে বেতন নিয়ে যেও।’ ব্যস, ওই দিনই শেষ দিন। কাজের সুযোগ দেয়ার জন্য, আস্থা রাখার জন্য সর্বোপরি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়ার জন্য এই প্রথম কর্মদাতার প্রতি মনে মনে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বিদায় নিলাম। বেতন নিতেও আর যাওয়া হলো না। এটাই প্রথম ও শেষ চাকরির স্বাদ।
তবে মাথায় একটা জট পাকিয়ে গিয়েছে, কিছু বিষয়ে বেশ দ্বন্দ্ব লেগেছিলো, একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম! সর্বক্ষণ পোকার মতো কিছু প্রশ্ন ঘুরছে; কিন্তু উত্তর আর পাই না। অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরি। অবশেষে একদিন উত্তর পাওয়া গেল আমার বন্ধ ঘরে, যে ঘরে আমার কালো বক্সটা থাকতো। উত্তর পেলাম চর্যাপদের কবিতায়, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের আধুনিক বঙ্গানুবাদ অন্তউড়ি’তে-
‘ভাবও হয়না যায়না অভাবও,
এমন তত্বে কি জ্ঞান পাবো!
লুই বলে বোঝা ভীষণ কষ্ট-
ত্রিধাতু বিলাসে হয়না স্পষ্ট।
যা কিছু অরূপ অতিন্দ্রীয়
বস্তুতে তা কি ব্যাখ্যনীয়!
কি জবাব দেব জলে বিম্বিত
চাঁদ সে সত্য নাকি কল্পিত’!
সত্যিই তো, পানিতে যে চাঁদের ছায়া পড়েছে সেটাও তো সত্য! জয় গুরু আদি কবি ঋষি মহাশয়, আপনাকে সালাম। এই ঘরে- এতো যে ছায়া-প্রচ্ছায়া জমেছে এতকাল ধরে, এর সবই তো অতীত দিনের প্রামাণ্য চিত্র- সেই দিনগুলো কি সামনের বস্তুগুলোর মধ্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য! তাই তো, যার কোনো রূপ নেই, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যও নয়, তা কি বস্তু দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়? বুঝলাম, ঘটনা ঘটেছে বলেই তো ছায়া পড়েছে। বেশ ভারমুক্ত হয়ে গেলাম। (চলবে)
বাহার রহমান
৩০ জুন ২০২০
সেই সব মাতাল দিনগুলো। কি পেলাম কি পেলাম না তার হিসেবের চেয়ে সেইসব দিনরাত্রির অমূল্য স্মৃতিগুলো কম না। আপনাকে ধন্যবাদ।
reza haq, ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য এবং পাঠ করার জন্য। সত্যি, অতীতের দিনরাত্রির স্মৃতি পরবর্তি সময়ে মূল্যবান ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠে। নিত্য উপহারের বেড়ে ওঠার গল্প এই ব্লগে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ হতে খাকবে, আমাদের সাথেই থাকুন, শুভকামনা নিরন্তর।
এই লেখাটিতে কেমন এক অদ্ভুত মায়াতে ভরপুর। নেই কোনো নাটকীয়তা। যা আছে তা ঘটনার সাবলীল বর্ণনা। যে বর্ণনা শেষপর্যন্ত নিয়ে যায়। এরকমই হওয়া উচিত স্মৃতিমূলক লেখাগুলো। যদিও আমাদের সংকীর্ণতার কারণে স্মৃতিতেই থাকে ফাঁক-ফোকর। ধন্যবাদ লেখককে।
Laboni, আপনার ভালো লেগেছে জেনে আরা আনন্দিত। আপনার মতামত আমাদের অনুপ্রণিত করবে, এজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আগামি দিনেও আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের গল্প ব্লগে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হবে। শুভকামনা সবসময়।
Awsome website! I am loving it!! Will be back later to read some more. I am bookmarking your feeds also.
cartel link what is the darknet market
dark web markets liberty market
cartel marketplace link what is the darknet market
alphabay darknet market darknet marketplace
darknet market bible how to get to darknet market
dark0de link darknet market search
liberty market darknet versus market
sildenafil 100 mg sildenafil sildenafil citrate tablets 100 mg
darknet markets reddit Silkkitie market url
darkmarkets tor2door market darknet
hydra darknet market darknet drugs
wall street market darknet asap market url
monopoly market darknet cartel marketplace url
darkmarket 2022 archetyp market
hydroxychloroquine 700 mg
cannahome darknet market darknet market guide reddit
darknet markets reddit wall street market darknet link
alphabay darknet market televend market
best darknet market 2021 bohemia market darknet
torrez market url are there any darknet markets left
zion darknet market televend market url
cypher link white house market url
dream market darknet link wall street market darknet reddit
darknet drug store cannahome link
monopoly market link monopoly market url
dark web sites tor markets
grams darknet market search vice city link
darkfox market url samsara market darknet
cartel link world market
white house darknet market cartel darknet marketplace
ivermectin human
alphabay link how to create a darknet market
how to buy from the darknet markets aero market darknet
dark web market list tor2door darknet market
2021 darknet market darknet market oz
buy anafranil south africa
dream market darknet link daeva market darknet
darknet market noobs drug markets dark web
liberty darknet market monero darknet markets
retino 05 cream
darknet marketplace darkmarket url
darknet drug links dark market onion
dark market 2022 tor markets
darknet market darkmarket link
darkmarket 2022 drug markets dark web
stromectol tablets uk
darknet market darknet market
tor markets bitcoin dark web
anafranil online canada
darkmarket 2022 dark market url
darknet drug links deep web drug links
dark web sites darknet drug links
tor market url dark web links
ivermectin 9mg
darkweb marketplace dark web sites
dark web market links deep web drug links
dark market list darknet markets
dark market url tor market links
dark market list darkmarket url
bitcoin dark web deep web drug links
dark web link dark market url
darkmarket link darknet drug links
darkmarket 2022 deep web drug url
2019 lyrica coupon
darknet market list tor darknet
purchase provigil without prescription modafinil 200mg canada
deep web drug store dark web market links
bitcoin dark web dark market link
drug markets onion darkweb marketplace
dark markets 2022 darknet markets
darkmarket dark market url
dark market link tor market url